পর্যটন নগরী বলতে যা বোঝায়, সেটা বাংলাদেশের একটি মাত্র এলাকাতে আছে। আর
সেটা হলো কক্সবাজার। কয়েকদিন আগেই গিয়েছিলাম। যতবারই গিয়েছি, প্রত্যেকবারই জায়গাটায়
কোন না কোন কিছু নতুন পেয়েছি। খুব দ্রুত বদলাচ্ছে এই কক্সবাজার শহর।
এখন গেলে দেখবেন রাস্তার পাশ ধরে সারি সারি হোটেল, রেস্টুরেন্ট আর টুরিস্ট
কোম্পানী, আর প্রায় সবাই সেন্ট মার্টিনস দ্বীপ, বান্দরবান, রাংগামাটি ঘুরিয়ে দেখানোর
প্যাকেজ নিয়ে বসে আছে।
আমরা ভাবলাম (মানে আমাদের গ্রুপ) একদিনে সেন্টমার্টিনস ঘুরে আসি। এক ইজি
বাইক ওয়ালা বুদ্ধি দিল। বলল, প্যাকেজ কোম্পানিই আপনাকে হোটেল থেকে তুলে নিবে, জাহাজে
উঠিয়ে দিবে, দ্বীপ ঘোরাবে আর আবার আপনাকে হোটেলে নামিয়ে দিবে। আমাদের গ্রুপ লিডার এমন
আরামের বর্ননা শুনে আর দেরি করলো না। হোটেলের সামনের যে টুরিস্ট কোম্পানীটা ছিল তাদের
সাথেই যোগাযোগ করে সব কিছু ফাইনাল করে ফেললেন।
তখন কেয়ারী সিন্দবাদ মাত্র চালু হয়েছে, মানে সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে।
আর কোন জাহাজ নেই তখনও। সবাই সকাল ৭টার মধ্যে ছোট একটা ব্যাগে এক প্রস্থ শুকনো কাপড়
নিয়ে রেডি হয়ে হোটেলের সামনে দাড়িয়ে রইল। আমি শুধু শাফিনের (আমার সাড়ে ৩ বছরের ছেলে)
কাপড় নিলাম। আমার স্বামী কয়েকবার গাইগুই করলো, ওর জন্যও কাপড় নেয়ার জন্য। আমি ওকে মনে
করিয়ে দিলাম, ও সব সময় বলে আমি বেশি কাপড় নিয়ে লাগেজ ভারি করে ফেলি। অতএব ওর আর কিছু
বলার রইল না। আসলে সাগরের পানিতে ভিজে, কাপড় গায়েই শুকিয়ে ফেলা উচিত। কারন মিস্টি পানিতে
গোসল না করা পর্যন্ত গায়ের বালি যাবে না। শুধু শুধু কাপড় পাল্টানোর মানে হয় না। আর
সবার সামনে কাপড় বদলানো আমার পছন্দ না। সবচেয়ে বড় কথা সাগরের পানিতে ভিজে কারো অসুখ
হয় না। এতো লেকচার শহরের মানুষকে দিয়ে লাভ নেই। তাই ওদের আর কিছু বললাম না।
৫ মিনিট লেট করে বাস এলো। এই প্রথম আমাদের ট্যুর গাইডকে দেখলাম। চিরকাল
দেখে এসেছি, ট্যুর গাইডরা বকবক করে মাথা ধরিয়ে দেয়। সব জায়গায় সাথে থাকে আর তাড়া দেয়
তাড়াতাড়ি চলুন। কিন্তু এবারকার মতো এতো ফ্লেক্সিবল ট্যুর গাইড আগে দেখিনি।
লোকাল বাস হলেও সিট কমফরটেবল ছিল। গাড়ি ছাড়ার পর ট্যুর গাইড বলল, নাস্তা
এখন খাবেন না পরে বাস থেকে নেমে? আমি ভাবলাম, পরে আবার নাস্তার জন্য সময় নস্ট করবোনা,
বললাম এখনই দিয়ে দিন। মেনু ডিম, ভাজি, পরোটা আর পানি (চা দেয়নি :( )। গাড়ি সুপার বেগে
চলা শুরু করলো। মনে হলো রোলার কোস্টারে বসেছি। একবার ডানে, একবার বামে কাত হয়, আবার
হার্ড ব্রেক কষে। আর মনে হলো, আমার পেটে কিছুক্ষন আগে যা ঢুকিয়েছি, তা বের হয়ে যাবে।
গাড়ির পিছন থেকে লোকেরা কিছুক্ষন বাস ড্রাইভারকে তারপর তার হেলপারকে বকা দিতে লাগল।
হেলপার ব্যাটা নাকি ঠিক মতোন ইন্স্ট্রাকশন দিচ্ছেনা তাই এই অবস্থা। জোরে ঝাকি খেলে
সবাই এক সংগে "আসতে" বলে উঠছিল। এই অবস্থায়ও আমার হাসি চেপে রাখা মুশকিল
হয়ে গিয়েছিল।
ঘাটে পৌছে দেখলাম জাহাজ ছাড়ার এখনও অনেক দেরি। ব্যাটা শুধু শুধু এমন জোরে
চালিয়েছে।
জাহাজে উঠে আমার ছেলে দুটো খুব ভালভাবে জিনিস শিখলো, এক জাহাজ সবাইকে নিয়ে
পানির উপর দিয়ে চলে, পানির ভিতরে চলে যায় না। দুই, জাহাজেও বাথরুম আছে।
এখানে একবারও আমাদের ট্যুর গাইড দর্শন দেয়নি। তার দেখা পেলাম সেন্ট মার্টিনস
এ নেমে। বলল, আপনারা সোজা চলে যান, রেস্টুরেন্ট পাবেন, খেয়ে নিন, এরপর সোজা সাগরে চলে
যান, ওখান থেকে হেটে হুমায়ুন আহমেদের বাড়ির কাছে চলে যাবেন, তারপর ভ্যান নিয়ে জাহাজে
চলে আসবেন। বলে সে চলে গেল।
আমি আমার স্বামীর মুখের দিকে তাকালাম, এতো মহাফাকিবাজ ট্যুর গাইড। ব্যাটা
আমাদের ছেড়ে দিয়ে নিজে রেস্ট নিচ্ছে। তবে সে একেবারে আমাদের পানিতে ভাসিয়ে দেয় নি।
একটা ছোট পিচ্চিকে দিয়ে দিয়েছে রাস্তা দেখানোর জন্য।
পরে দেখলাম এই পিচ্চি যথেস্ট ভাল গাইড। সে আমাদের ব্যাগ ক্যারি করেছে,
যখন আমরা পানিতে নেমেছি, ছবি তুলে দিয়েছে। ছবিও সে ইনস্ট্রাকশন দিয়ে তুলে। আমাকে বলল,
সপরিবারে পাথরের উপর দাড়াতে, তারপর ছবি তুলে দিল। ডাব খাওয়ার সময় ছবি তুলছিল। আমি স্ট্র
মুখ থেকে নামিয়ে নিতেই বলল, খেতে থাকুন, মুখে দেয়ার পর ছবি তুলব।
সেন্টমার্টিনসের একমাত্র যান ভ্যান গাড়িটে জাহাজে ফেরার সময় বলল, এ ছাড়া
এখানে আর কিছু চলে না। মিনিস্টার আসলেও ভ্যানে চলতে হবে।
লেখন হুমায়ুন আহমেদ সম্পর্কে বলল অনেক দিন আসেন নি। তবে ওনার বাসা শাওন
ভাড়া দেয়।
জাহাজে করে ফিরে বাসে ওঠার সময় আবার আমাদের পুরাতন গাইডের দেখা মিলল। ইজি
বাইক ওয়ালা ঠিকই বলেছে। ওরা আমাদের আবার হোটেলের সামনে নিয়ে দিয়েছিল।
No comments:
Post a Comment