জীবনে ভুল বোঝাবুঝির চেয়ে যন্ত্রণার কি আর কিছু হতে পারে? আর সে মানুষটি যদি হয় আমার মতো বোকাসোকা, তাহলে তো কপালে আরো দু:খ। কারন আমি এখনও পারিনা মানুষের ভুল বোঝা ঠিক করতে। ছোট বেলা থেকেই মানুষের এই ভুল বোঝার কষ্ট পাচ্ছি। কেন যেন খুব অভিমান হয়, কেন ভুল বুঝলো, এতোদিনের পরিচিতিতে কি এই বুঝলো, একবারও মনে হলোনা এমন হতে পারে না? আর ভেবে পাইনা, কিভাবে এই ভুলবোঝাবুঝিগুলো ঠিক করবো। উদাহরণ দিচ্ছি:
আমার বয়স তখন ৫/৬ বছর। আমাদের পাশের বাসায় একটা ছোট ছেলে ছিল। হাটতে পারতো, তবে কথা বলতে পারতো না। দু'টো বাসার মাঝখানে ১০ ফুটের মতো খালি জায়গা ছিল। একদিন বিকালে আমি খেলতে গিয়ে দেখলাম, সেই ছেলেটি ওখানে খেলছে। ও আমাকে দেখে, আমার পাশ কাটিয়ে ও অন্য জায়গায় যেতে গেল। আমি খেলার ছলে ওর সামনে গিয়ে দাড়ালাম। ও হেটে সরে অন্য পাশ দিয়ে যেতে চাইলো। আমি আবার ওর সামনে দাড়ালাম। পিচ্চির এতো কষ্ট সহ্য হলো না। ও ভ্যা করে কেদে দিল। আমি কি বলব বোঝার আগেই ওর কান্না শুনে ওর বাবা বের হয়ে এলেন। আমার দিকে তাকালেন, মুখে চুক চুক শব্দ করলেন, মাথা নাড়লেন ডানে বামে আর ছেলেকে নিয়ে চলে গেলেন। আমি কিংকর্তব্য ব্যমুড় হয়ে দাড়িয়ে রইলাম। কি হলো? এমন করলেন কেন ঐ ভদ্রলোক। ভেবেছিলাম ঘটনার শেষ এখানেই। নাহ, এটা ঘটনার শুরু।
রাতে আব্বা মুখ কালো করে বাসায় ফিরলেন। আম্মা-আব্বা কি যেন কানাকানি করলেন। তারপর দুজনেই মুখ গোমড়া করে রাখলেন। রাতে খাবার সময় আম্মা শুধু বললেন, তুমি পাশের বাসার ছেলেকে মেরেছো? আমি বললাম, কি?? আম্মা আর কিছু না শুনে চলে গেলেন। আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না।
ছেলেটার একটা বোন ছিল, আমার চেয়ে এক বছরের ছোট। ও ঘোষনা করলো ও আমার সাথে আর খেলবেনা, আমি পচা তাই। আমরা যখনই ঘরে বা বাইরে যেতাম, ওরা দেখতো। আর মেয়েটা জোরে জোরে চিৎকার করে আমার আব্বাকে বলত, কাকু কাকু, *** আপু আমার ভাইকে মেরেছে। আম্মা-আব্বা মুখ কালো করে রাখতেন। আম্মা শুধু একবার বলল, ও যদি তোমার বোনকে মারতো, তুমি কি এভাবে সব সময় বলতে পারতে?
আমার চোখ ফেটে পানি চলে আসতো। কেউ একবারও আমার কাছে জানতে চাইলো না, কি হয়েছিল? আমি কাউকে আর নিজে থেকে বলিনি।
No comments:
Post a Comment